মানুষের জীবনে সন্তান এক অমূল্য নিয়ামত। এই নিয়ামতের সঠিক হক আদায় করা, তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করা প্রতিটি পিতা-মাতার জন্য এক গুরু দায়িত্ব।
আধুনিক যুগে শিক্ষার প্রতিযোগিতা ও জীবনযাত্রার ব্যস্ততায় আমরা প্রায়শই ভুলে যাই যে, আমাদের সন্তানদের প্রকৃত সফলতা শুধুমাত্র পার্থিব শিক্ষায় নয়, বরং দ্বীনী মূল্যবোধের সমন্বয়ে সম্ভব। একজন মুসলিম পিতা-মাতা হিসেবে আমাদের প্রথম ও সর্বোচ্চ দায়িত্ব হলো সন্তানকে দ্বীনের পথে পরিচালিত করা।
একবিংশ শতাব্দিতে এসে অনেক অভিভাবকই সন্তানদের দুনিয়াবি সাফল্যের পিছনে ছুটতে গিয়ে এক গুরুতর ভুল করে বসেন—তারা আখিরাতের চেয়ে দুনিয়াকে বেশি প্রাধান্য দেন। এর ফলশ্রুতিতে সন্তানদের জীবনে ইসলামের মূল স্তম্ভ সালাত সবচেয়ে বেশি অবহেলিত থেকে যায়।
আপনার সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন কিংবা প্রাইভেটে। সময়টা ঠিক যোহর, আছর বা মাগরিবের কোন সময়। অর্থ্যাৎ সলাতের সময় শেষ হয়ে যায়, তখনো সে বিদ্যালয় কিংবা কোচিং-এ আছে। আপনার সন্তানের উপর কিন্তু সলাত ফরজ । আপনার দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়ার এই সিন্ধান্তের জন্য আপনার সন্তান সলাত পড়া থেকে বিরত থাকলো। ইচ্ছাকৃত এভাবে দিনের পর দিন সলাত ছেড়ে দিলে আপনার সন্তান মুসলিম হিসাবে বেড়ে উঠবে আপনি কিভাবে ভাবলেন?
যেখানে সালাত ছেড়ে দেওয়া কোনো ছোট বিষয় নয়। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমাদের ও তাদের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত। যে তা ছেড়ে দেয়, সে কুফরী করলো”। [তিরমিযী, হাদীস: ২৬২১]
আপনার সন্তান যখন দিনের পর দিন (পড়াশোনা, পরীক্ষা কিংবা দুনিয়াবি ব্যস্ততায়) ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে, তখন সে শুধু একটি ফরজ ইবাদতই ছেড়ে দিচ্ছে না, বরং তার ঈমানের ভিত্তিও দুর্বল হয়ে পড়ছে। একটি শিশু যখন জীবনের শুরু থেকেই শেখে যে আখিরাতের চেয়ে দুনিয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তখন তার মানসিকতা সেভাবেই গড়ে ওঠে। এমন পরিবেশে বেড়ে ওঠা সন্তান কীভাবে একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে গড়ে উঠবে?
আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, যে সন্তান আখিরাত ভুলে দুনিয়ার পিছনে ছুটতে শিখে, সে কিভাবে শেষ বয়সে আপনার পরম আশ্রয়দাতা হয়ে উঠবে? যে সন্তান জীবনের শুরু থেকেই তাকওয়ার পরিবর্তে চাকচিক্যময় জীবনকে গুরুত্ব দিয়েছে, তার কাছে আখিরাত তো মরীচিকাই মনে হবে। যেখানে দুনিয়াবি স্বার্থকে পরিত্যাগ করে তার কাছে পিতা-মাতার সেবাও একটি বোঝা মনে হবে।
সন্তান যখন কেবল দুনিয়াবি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়, তখন তার কাছে বাবা-মা শুধুমাত্র প্রয়োজনের সময়ে ব্যবহারের বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। আর সেই কারণেই হয়তো অনেক বাবা-মার শেষ ঠিকানা হয় রাস্তায় কিংবা বৃদ্ধাশ্রমে। এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়—এটা আমাদের ভুল সিদ্ধান্তেরই ফল।
একটি গভীর সত্য হলো যে,
সন্তানের মূল্যবোধ তার পিতা-মাতার সাথে সম্পর্কের ধরন নির্ধারণ করে। যখন একটি সন্তান শুধুমাত্র পার্থিব সম্পদের মালিক হয়ে বড় হয়, তখন পিতা-মাতাকেও সে সেই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখে। এমন পরিস্থিতিতে পিতা-মাতা তাদের নিজ সন্তানের কাছেই ভয়ে ভয়ে কথা বলতে বাধ্য হন, যেন সন্তান অসন্তুষ্ট না হয়ে যায়।
অন্যদিকে, যে সন্তান ঈমান ও তাকওয়ার দৌলতে সমৃদ্ধ হয়ে বড় হয়, সে পিতা-মাতার প্রতি গভীর সম্মান ও ভালোবাসা পোষণ করে। এমন সন্তান নিজেই ভয়ে ভয়ে কথা বলে, যেন কোনোভাবে পিতা-মাতা অসন্তুষ্ট না হয়ে যান।