শিক্ষকদের প্রচেষ্টা নষ্ট করে দিবেন না
🧊 সম্মানিত অভিভাবকগণ,
সন্তান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার পক্ষ থেকে দেওয়া একটি মহান আমানত। এই আমানতের হক আদায় করা আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্য এবং ইবাদত।
আপনারা আপনাদের সন্তানদের দ্বীনি শিক্ষা ও আল্লাহ্ভীতি তৈরির উদ্দেশ্যে মাদরাসা কিংবা ইসলামিক স্কুলগুলোতে পাঠান। শিক্ষকরা সেখানে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, দিনের পর দিন চেষ্টা করে যাচ্ছেন যেন আপনার সন্তানের কচি অন্তরে আল্লাহভীতি, রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ ও ইসলামী আদর্শ গেঁথে দেওয়া যায়। (যদিও কিছু জায়গায় শিক্ষকদের মধ্যেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে)
তারা চেষ্টা করছেন যেন আপনার সন্তান পরিশুদ্ধ এক মুসলিম হিসেবে গড়ে ওঠে, যে আল্লাহ তা'আলাকে ভয় করবে, তাঁর দ্বীনকে ভালোবাসবে, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলে।
📍তবে একটি বড় প্রশ্ন থেকেই যায়:
আমরা, বাবা-মা হিসেবে—এই চেষ্টা ও প্রচেষ্টাকে কতটুকু সহায়তা করছি?
নাকি না জেনে, না বুঝে সেই পরিশ্রমটাকেই আমরা বাড়িতে এসে মুছে দিচ্ছি?
🎯 কীভাবে আমরা নিজেদের অজান্তে সন্তানদের ঈমানি বেড়ে ওঠাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছি?
🔻 যখন আমাদের ঘরে সারাক্ষণ গান-বাজনা, নাটক-সিনেমা আর দুনিয়াবি ব্যস্ততা লেগেই থাকে, তখন সন্তানদের মন থেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার স্মরণ এবং ইসলামী জীবনযাপনের গুরুত্ব হারিয়ে যায়। তাদের নিষ্পাপ মন ধীরে ধীরে দুনিয়ার চাকচিক্যে মগ্ন হয়ে পড়ে, আর দ্বীনের শিক্ষা তাদের কাছে কেবল মাদরাসা কিংবা মক্তবের বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
🔻 যখন আমরা আমাদের আদরের সন্তানদের এমন পোশাক পরতে উৎসাহ দেই যা ইসলামসম্মত নয়, যেমন – সেলিব্রিটিদের অনুকরণে অশ্লীল পোশাক বা বিজাতীয় সংস্কৃতির পোশাক, তখন তাদের মনে ইসলামী শালীনতাবোধের গুরুত্ব কমে যায়। সন্তানদের চুলের কাটিং-এ ও যখন আমরা বিজাতীয় স্টাইলকে প্রাধান্য দেই, তখন আমরা নিজেরাই তাদের চোখে ইসলামী আদর্শকে গৌণ করে তুলি।
🔻 আমাদের সন্তান যখন দেখে আমরা নিজেরাই সালাতের ব্যাপারে অলসতা করছি, তখন তাদের কচি মনে এই ধারণা জন্মায়, মাদ্রাসার উস্তাযরা যতই বলুক সালাত হয়তো ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের নিজেদের সালাতে অনিয়মিত হওয়া তাদের জীবনেও সালাতের প্রতি অনীহা তৈরি করে, যা শিক্ষকদের সমস্ত পরিশ্রমকে বৃথা করে তোলে।
🔻 আমাদের ঘরে যখন গীবত, পরনিন্দা বা অন্যের সাথে মন্দ ব্যবহার করা হয়, এমনকি গালাগালির মতো অশোভন বাক্য ব্যবহার করা হয়, তখন আমাদের সন্তান আমাদের দেখেই সেগুলো শিখে ফেলে। ছোটবেলা থেকে এই পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুরা কীভাবে নৈতিক ও সুন্দর আচরণ শিখবে? শিক্ষকরা যত চেষ্টাই করুন না কেন, ঘরের এই নেতিবাচক পরিবেশ তাদের সকল শিক্ষাকে দুর্বল করে দেয়।
মনে রাখবেন, শিক্ষকরা যে কাজটি করছেন, তা মূলত আপনাদেরই কাজ। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার সামনে আপনার সন্তানদের জন্য প্রথম এবং প্রধানত আপনিই জবাবদিহি করবেন। আপনিই তার দায়িত্বশীল।
শিক্ষকরা তাদের সামান্য সময় দেন, কিন্তু আপনারাই তাদের জীবনের বেশিরভাগ সময় তাদের সাথে কাটান। প্রতি সপ্তাহে সন্তানরা গড়ে মাত্র ২০-২৫ ঘণ্টা শিক্ষকদের সাথে থাকে, বাকি বিশাল সময়টা তারা আপনাদের কাছেই থাকে। তাই তাদের সঠিক ইসলামী মূল্যবোধে গড়ে তোলার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব আপনাদেরই। দয়া করে আরও বেশি করে চেষ্টা করুন।
বর্তমান সময়ের অধিকাংশ অভিভাবক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার দেওয়া এই আমানতকে (সন্তানদের) নৈতিকভাবে ভালোভাবে গড়ে তোলার পরিবর্তে শুধুমাত্র তাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য, খাওয়া-দাওয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। আমরা ভাবি, একটি ভালো মাদরাসা, মক্তব বা ইসলামিক প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দিলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ। সকল দায়িত্ব তাদেরই!
কিন্তু সন্তান যদি দ্বীন না জানে, যদি আল্লাহকে না চেনে, যদি রাসূল ﷺ কে ভালো না বাসে— তবে তার বাহ্যিক সৌন্দর্য, পড়াশোনা কিংবা উন্নত ক্যারিয়ার দিয়ে আপনি কী করবেন?
🌺 দয়া করে এই বিষয়টি গভীর মনোযোগ দিয়ে উপলব্ধি করুন। আপনাদের সন্তানকে আপনাকেই গড়ে তুলতে হবে। আপনারাই তাদের জীবনের প্রথম শিক্ষক, তাদের আদর্শ। বাকি সবাই কেবল আপনাকে সহযোগিতা করবে। আসুন, আমরা সকলে মিলে আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলি, যেন তারা দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হতে পারে। তাদের নৈতিক ও দ্বীনি শিক্ষার ভিত্তি যেন আপনাদের হাত ধরেই মজবুত হয়।
মনে রাখবেন, প্রকৃত সুন্দর ভবিষ্যৎ দুনিয়াতে নয়, আখিরাতে।