🌳ভাবনাটা আপনাদের🌳
বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও বলছি, চোখের সামনে প্রি-টিন ও টিন-এইজ বয়সের বাচ্চাগুলোকে ভয়ংকরভাবে ভুল পথে পা বাড়াতে দেখছি। এটা শুধু ভুল নয়, বরং এটা ধ্বংসের পথ।
আপনারা হয়তো ভাবছেন, আপনাদের সন্তানদের খুব জিদ বেড়েছে, প্রচন্ডরকম অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে কিংবা পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবতা মারাত্মক তিক্ত। আমি যা দেখছি, তা সত্যিই মারাত্মক। শিশুদের নিয়ে কাজ ও শিক্ষকতা পেশার কারণে সমস্যাগুলো আরো কাছ থেকে দেখার সুযোগ হচ্ছে। বিশ্বাস করুন, আমি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সোনামণিদের স্কুলে এখনোও নিজেকে জড়িয়ে রেখেছি ১. ওদের টানে ২. ওদের কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করার জন্যে।
গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে (শিক্ষকতার কারণে) চোখের সামনে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলোকে বড় হতে দেখেছি। দেখেছি তাদের অমূল পরিবর্তন।
⚠️ বর্তমানে ক্লাসরুম গুলোতে তাদের দৌড়াদৌড়ি থেকেও বেড়েছে আগ্রাসী আচরণে মারামারির প্রভাব।
⚠️ শিক্ষকদের কথা না শোনার মনোভাব বেড়েছে হাজারগুণ। আর শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণের সংখ্যাটা নেহায়াত কম নয়। (প্লে-নার্সারি শ্রেণি বাদে)
⚠️ ক্রিকেট বা ফুটবল মাঠের গল্প এখন ক্লাসে হয় না, হয় ফ্রি-ফায়ার, পাবজির গল্প।
⚠️ ছোট্ট ছোট্ট মেয়েগুলোর চড়ুইভাতির গল্পের জায়গাটায় স্থান পেয়েছে BTS, BlackPink আর নামকরা সেলিব্রিটিরাদের চোখধাঁধানো লাইফস্টাইল।
⚠️ আলিফ লায়লা, সিনবাদের জায়গাটা দখল করছে অশ্লীল ওয়েব সিরিজ, অশ্লীল গালিতে পরিপূর্ণ নাটক (ব্যাচেলর পয়েন্টের মত), ভায়োলেন্সে ভরপুর সিনেমার জগৎ। (যদিও আমি আলিফ লায়লা বা সিনবাদ দেখার পক্ষেও নই)
⚠️ আগের দিনের খেলার মাঠে ঘটে যাওয়া গল্পের বদলে পর্ণগ্রাফি, অশ্লীল ভিডিও আর প্রেম ভালোবাসার গল্পে ভরপুর আড্ডার ময়দান।
⚠️ পাড়া-মহল্লায় বড় ভাইদের আধিপত্যে তাদের (কিশোরদের) করা হচ্ছে ব্যবহার।
⚠️ কিশোর গ্যাং-এ নাম লিখিয়ে তারা রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে পাড়ার ডন/মাস্তান।
⚠️ সিগারেট আর ভেপের কালো ধোঁয়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে তাদের শৈশব।
⚠️ লজ্জা নামক ঈমানের একটি শাখা একদম শুন্যের কোঠায়। অবলিলালায় তারা হারাম সম্পর্কের কথা পরিবার, সমাজ, মিডিয়ার সামনে বলতে পারছে।
⚠️ শারিরীক সম্পর্ক তাদের কাছে ডাল-ভাত। হালাল বৈবাহিক সম্পর্ককে নানান মারপ্যাঁচে ফেলে তা প্রায় এখন মৃত্যুর দুয়ারে।
এমন কয়টি সমস্যার কথা বলব। এগুলো সবই একদম কাছ থেকে দেখছি। শিক্ষার্থীদের বার বার নসিহা করছি। পথে, অলিতে-গলিতে কিশোরদের ভুল দেখলেই থমকে গিয়ে উত্তমভাবে সংশোধনের চেষ্টা করছি।
পরিবার চুপ থাকতে বলে। যুগের ভয় দেখায়। মাঝেমধ্যে এক-আধটু ভয়ও লাগে। কিন্তু মৃত্যু তো গাড়ির তলায় চাপা পড়েও হতে পারে, তাই বলে তো রাস্তায় চলা বন্ধ করি না। সাধ্যের মধ্যে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির জন্যে চেষ্টা করি ও করেই যাবো ইন শা আল্লাহ।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভিজিটে যাই, পরিচালকদের সাথে নানান বিষয় নিয়ে কথা বলি। তাদের অনুরোধ করি, অভিভাবকদের সাথে কথা বলুন নতুবা আমাকে বলার সুযোগ করে দেন।
তারা (অভিভাবকরা) বিপর্যয় যেমনটি ভাবছে, সমস্যা তার থেকে বহুদূর এগিয়ে গেছে। আমি বুঝাবো, ১০০ জনে ১০ জন হলেও বুঝবে। এভাবে সংখ্যাটা অনেক কমবে ইন শা আল্লাহ ।
শিশু-কিশোরদের নিয়ে দয়া করে মাসিক বা ত্রৈমাসিক একটা আয়োজন করুন। তাদের কথাগুলো শুনি, তাদের সাথে কথা বলি। আমি বিশ্বাস নিয়ে বলতে পারবো, ১০০ জনে অন্তত ২০ জনে হলেও বুঝে সংশোধন হবে ইন শা আল্লাহ। এভাবেই এগোতে হবে।
কথাগুলো এই জন্যেই বললাম, আপনারা যে লেন্সে বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের দেখছেন, আমি আরো তীক্ষ্ণ নজরে তাদের দেখছি, পর্যবেক্ষণ করছি। সত্যিই আমরা ভয়ংকর একটা বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। এটা একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ বলা চলে।
এই বিপর্যয় আল্লাহ তা'আলা রহমতে আমাদের সবাইকে এক হয়ে ঠেকাতে হবে। হয়তো সবাইকে পারবো না, তবে চেষ্টাটুকু তো করতে হবে। সবাই নিজ পরিবার থেকে সচেতন হলে অনেকাংশে সমস্যাটি কেটে যাবে ইন শা আল্লাহ।
মনে রাখবেন, আপনার মৃত্যুর পর সবচেয়ে যে আপনাকে বেশি সাপোর্ট দিবে (নেক আমলের মাধ্যমে), সে হচ্ছে আপনার সালেহ (নেক) সন্তান। বিশ্বাস করুন, জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো তারপর নিজ পরিবারকে।
আসুন আমাদের সন্তানদের রক্ষা করার চেষ্টা করার কাজে সাধ্যমতো সবাই এগিয়ে আসি। পাড়া-মহল্লা, স্কুল-মাদ্রাসা, বিভিন্ন সামাজিক ফাউন্ডেশনের উদ্দ্যেগে তাদের সংশোধন করার চেষ্টা করি।