পারিবারিক ভিত্তি গড়ে তুলুন দয়ার ভিত্তিতে
শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আল বদর হাফিজাহুল্লাহ বলেছিলেন,
যে সন্তান ভালোবাসা, মমতা, হাসিমুখ, কোমল ভাষা এবং ভালোবাসার আলিঙ্গনের পরিবেশে বড় হয়—সে সন্তান ইন শা আল্লাহ বড় হয়ে নম্র, শ্রদ্ধাশীল, ভালোবাসাপূর্ণ এবং নেক স্বভাবের হয়।
অন্যদিকে, যে সন্তান কঠোরতা, রূঢ় কথা, রাগারাগি ও শারীরিক শাসনের মধ্যে বড় হয়, তার মধ্যে গড়ে উঠতে পারে ক্ষোভ, দূরত্ব, কিংবা বিদ্রোহ। এমনকি সে যদি বাবা-মায়ের কথা শোনেও, তা হয় ভয় থেকে, ভালোবাসা থেকে নয়।
আসুন একটু বিস্তারিত আলোচনা করি...
🌻 বাস্তব জীবনের দুটি চিত্র থেকে বুঝার চেষ্টা করি:
🌟 আপনার সন্তান স্কুল থেকে বাসায় ফিরেই দৌড়ে আপনার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তার সারাদিনের গল্প শোনায় এবং বিভিন্ন প্রশ্ন করে। কারণ সে জানে, আপনি তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন, তাকে বুকে টেনে নেবেন এবং ভালোবাসার সাথে উত্তর দেবেন।
🌟 অন্যদিকে ধরুন, আপনার সন্তান স্কুল থেকে ফিরে চুপচাপ দরজা দিয়ে ঢোকে, আপনার চোখের দিকে তাকাতে ভয় পায়, কারণ সে জানে না কখন আপনি রেগে যাবেন। গায়ে হাত তুলে বসবেন। সে এভাবেই ভয়ে ভয়ে বেড়ে ওঠে।
🌻 কঠোরতা শক্তি নয়
মনে রাখবেন, কঠোরতা কখনো শক্তি নয়। আমাদের অধিকাংশ বাবা-মা কঠোরতাকে শক্তি মনে করে ভুল করেন। তারা অনেকেই কানে টান দিয়ে "মজা" করা, কিছু হলেই রাগে চিৎকার করে কথা বলা, ভুল করলে শাস্তি দেয়া, সামান্য কিছুতে চড়-থাপ্পড় লাগানো ইত্যাদি কিছুই মনে করেন না। আমাদের মনে রাখতে হবে, এটা শাসন নয়, এটা এক ধরণের জুলুম।
নবী করিম ﷺ শিশুদের সঙ্গে হাসতেন, মজা করতেন—কিন্তু কখনও ভয় দেখাতেন না, লজ্জা দিতেন না। যে বাবা-মা কখনো হাসেন না বা সামান্য ভুলের জন্য সন্তানকে অপমান করেন, তিনি মূলত একটি ভাঙা বা কঠোর হৃদয়ের মানুষ তৈরি করেন।
🌷 সন্তানের হৃদয় গঠনের সূচনা কোথায়?
আপনি যদি একজন ভালো ন্যায়বান, দ্বীনদার সন্তান গড়তে চান এই সমস্ত কিছুর শুরু হবে জীবনসঙ্গী নির্বাচনের মাধ্যমে। আপনি কাকে বিয়ে করছেন, তা শুধু আপনার (সুকুন) শান্তির জন্য নয়, আপনার সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একজন এমন জীবনসঙ্গী বেছে নিন, যার চরিত্রে দয়া রয়েছে। যে রেগে না গিয়ে বুঝিয়ে বলে, যে ধমক না দিয়ে সংশোধন করে, যে কষ্ট দিলেও ক্ষমা চাইতে জানে। এমন মানুষ বাছুন যে মানসিকভাবে স্থিতিশীল, শান্ত প্রকৃতির এবং কোমল আচরণের অধিকারী।
🌷 শিশুরা যা দেখে, তাই শেখে...
যে ছেলে তার বাবাকে মায়ের প্রতি সম্মান দেখাতে এবং মাকে বাবার সাথে নরম সুরে কথা বলতে দেখে, সে সেই মূল্যবোধ নিয়েই বড় হয়।
যে কন্যাশিশু দয়ার পরিবেশে বড় হয়, যেখানে তাকে কখনো তাচ্ছিল্য করা হয় না এবং তার কথা শোনা হয়, সে বড় হয়ে এমন একজন মা হবে, স্ত্রী হবে, যে জানে কীভাবে ভালোবাসতে হয়।
তাই আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, দয়া কোনো দুর্বলতা নয়। এটা নবীজী ﷺ আদর্শ।
নবী করিম ﷺ বলেন:
“যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হবে না।”
“তোমরা যারা পৃথিবীতে আছো, তাদের প্রতি দয়া করো—তাহলে আকাশের মালিক তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।”
সুতরাং,
ঘর গড়ে তুলুন দয়ার ভিত্তিতে।
জীবনসঙ্গী বেছে নিন দয়ার মানদণ্ডে।
সন্তানকে বড় করুন দয়ার আদর্শে।
এটা শুধু একটি প্যারেন্টিং কৌশল নয়—এটাই সুন্নাহ।
আল্লাহ তা'আলা আমাদের ঘরগুলোকে দয়ার বাসস্থান বানিয়ে দিন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন আমাদের চেয়েও বেশি নেককার ও আল্লাহপ্রিয় হয়।