🌿কথাগুলো সচেতন মুসলিম অভিভাবকদের জন্যে🌿
বিশেষ একটা কাজে ঢাকায় আসছি বিকালে। সন্ধ্যায় বাহিরে বের হওয়ার পর হঠাৎ বনশ্রীর H ব্লকে বিশাল লাইন দেখলাম। লাইনে প্রত্যেক পুরুষ-নারীর (অভিভাবকদের) সাথে ছোট্ট ছোট্ট সোনামণিদের দেখতে পেয়ে কৌতূহল বশত এগিয়ে গেলাম। যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম, বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি শিশুতোষ ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ডের উদ্বোধন আজ। তাই বাবা-মায়েরা সাথে করে সন্তানদের নিয়ে আসছে।
🔻 শুরুতে মাথায় একটি প্রশ্ন জাগলো?
যেহেতু আজ উদ্বোধন হচ্ছে, তাহলে তো এখানে এটা থাকবে। (এমন নয় একদিনের মেলা) তাহলে এই গরমের মধ্যে এত বিশাল লাইন ধরে নিজে ও সন্তানদের কষ্ট দিয়ে কি প্রয়োজন আজকেই আসার?
পরে ফেসবুকে নাম সার্চ দিয়ে জানতে পারলাম, উদ্বোধন উপলক্ষে আজ এক ঘন্টার ফ্রি এন্ট্রি সুবিধা দেয়া হয়েছে। তাই মানুষগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। যাই হোক, এটা তাদের অধিকার।
কিন্তু যে কারণে আমি আলোচনাটি করছি,
ফেসবুকে সার্চ করার সময় আজকের উদ্বোধনের কিছু ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ চোখে পড়েছে। দেখা মাত্রই খারাপ লেগেছে, যখন ছোট একটা মামনিকে হিজাব পড়ে মিউজিকের তালে তাকে নাচতে দেখেছি। সত্যিই খারাপ লাগছে। মুসলিম অভিভাবকটির জন্যে খারাপ লাগছে!
🔻 আমরা আসলে ইসলাম বলতে কি বুঝি?
মাথায় হিজাব বা টুপি পড়ে সব কিছুই করা যাবে?
মসজিদে যাবো মন্দিরেও যাবো এমন আমার দ্বীনের শিক্ষা? সন্তান কুরআনও পড়বে আবার গানের ক্লাসেও গান শিখবে?
ইসলামিক স্কুল বা মাদ্রাসায় যেতে পর্দা করাবো আবার বিয়ের অনুষ্ঠানে হলুদ/লাল শাড়ি পড়ে একদিনের মুসলমানিত্বও ভুলে যাবো?
এমন অসংখ্য ঘটনা উল্লেখ করতে পারবো, সেখানে আমরা দ্বীনকে ভুলে হারামের সাথে আপোষ করে ফেলি!
এই ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা কুরআনুল কারিমে বলেন,
তোমরা কি কিতাবের (কুরআনের) কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? (সূরা বাকারা: ৮৫)
বাংলাদেশের প্রচলিত বেশিরভাগ ইনডোর প্লে গ্রাউন্ড মুসলিম শিশুদের জন্যে উপযুক্ত নয়। এই সকল প্লে-গ্রাউন্ডে রয়েছে মিউজিক, নাচ, বেপর্দা ইত্যাদির মত হারাম আয়োজন। যা একজন সচেতন মুসলিম অভিভাবক কখনোই সাপোর্ট করতে পারেন না।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন, স্যার শহরে বাচ্চাদের দম ফেলার মত একটুও জায়গা নেই। খেলার মাঠগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাদের মানসিক ও শারিরীক বিকাশের জন্যে কোন একটা ব্যবস্থা তো থাকা দরকার। তাই এসব প্লে গ্রাউন্ডে নিয়ে যেতে বাধ্য হই।
উত্তর: প্রথমত, আপনি যা বলেছেন তা ১০০% সত্যি। বাস্তবে বাচ্চাদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশের জন্যে এমন ব্যবস্থা নেই। এটা হয়তো আমাদের ব্যর্থতা যে মুসলিম শিশুদের জন্যে এমন আয়োজন করতে পারি নি।
কিন্তু সম্মানিত অভিভাবক, ব্যবস্থা নেই তাই বলে কি আপনি আমরা হারামের সঙ্গে আপোষ করে ফেলব? জেনেশুনে আমাদের সন্তানদের হেদায়েতের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবো? ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক আয়োজনে সন্তানদের নিজ উদ্যোগে এগিয়ে নিয়ে যাব?
প্রশ্নগুলো মাথায় রাখবেন।
এবার আসি সমাধানে:
আমার গ্রুপে যারা আছেন, তারা আমার সপ্তাহিক তারবিয়াহ একাডেমির স্বপ্নের কথা জানেন। আমার স্বপ্ন শিশুদের জন্য অন্ততপক্ষে সপ্তাহে একটা দিন তারবিয়াহ শিক্ষার আয়োজন করা। যেখান থেকে শিশুরা ঈমান, আদব-আখলাক, সীরাহ, নবি-রাসূল, সালাফদের জীবনী ইত্যাদি শিখবে। (চেষ্টা চললাম)
সেখানেই চেয়েছি মুসলিম শিশুদের জন্যে একটা ইনডোর প্লে গ্রাউন্ডের ব্যবস্থা করতে। যেখানে এমন হারাম বিষয়গুলো থেকে আমাদের সন্তানদের হেফাজত রাখতে পারবো এবং তারা আনন্দও পাবে ইন শা আল্লাহ।
যদিও কাজটি কঠিন। কারণ...
১.মিউজিক ছাড়া অধিক পরিমাণে ইলেকট্রনিক ডিভাইস সংগ্রহ করা। (যদিও অল্প অল্প দিয়ে শুরু করা সম্ভব)
২. আমাদের সচেতন মুসলিম অভিভাবকদের সংখ্যা খুবই কম। ফলে ভাড়া, যন্ত্রপাতি, আয়োজন সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য।
যাই হোক, আল্লাহ তা'আলা আমাকে ভালো রিজকের ব্যবস্থা করে দিলে আমি ভবিষ্যতে এমন আয়োজন করতে চাই। আল্লাহ তা'আলা যেন কবুল করেন। যে কেউ দ্বীনের স্বার্থে আমাকে এই বিষয়ে সহোযোগিতা করতে পারেন ইন শা আল্লাহ।
সবশেষে বলব, আমাদের ছোট্ট সোনামণিদের হৃদয়ে যদি মিউজিক, নাচের মত হারামের প্রভাব শিশু বয়সেই পড়ে যায়, তাহলে সেই নফসকে পরবর্তীতে কন্ট্রোল করা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। একবার ভাবুন তো, আপনার ছোট্ট ভুলে আপনার সন্তান যদি ভুল পথে পরিচালিত হয়, তাহলে হাশরের মাঠে রবের কাছে আপনি কিভাবে দাঁড়াবেন? সেই সন্তানটি আপনার আমলে সালেহ না হয়ে আপনার বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়ে যাবে না তো!